মাদকের ভয়াবহতা রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। তাই মাদকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরালো করতে দেশের সব স্কুল ও কলেজে গঠিত কমিটিগুলোকে সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এসব কমিটি যেন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
সম্প্রতি, মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৭ম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাদকের কুফল নিয়ে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো এবং জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে গঠিত মাদকবিরোধী কমিটির কার্যক্রম দৃশ্যমান হয় করতে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গঠিত কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা (কমিটি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা এবং নিয়মিত প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। একইসঙ্গে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি কলেজ, টিটিসি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। আর সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় তদারকি ও সহযোগিতার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এর আগে, ২০২২ সালে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথমবারের মতো মাদকবিরোধী কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তার। তখন পরীক্ষামূলকভাবে কিছু স্কুল ও কলেজে এই কমিটি গঠন করা হয়। সফলতার অভিজ্ঞতা থেকে পরে তা দেশব্যাপী বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ধারাবাহিকভাবে কমিটির কাঠামো নির্ধারণ, শিক্ষক-অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হয়।
উল্লেখ্য, গঠিত মাদকবিরোধী কমিটির প্রধান দায়িত্ব হলো— শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং মাদকবিরোধী একটি ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলা। এ কমিটি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক সভা, সেমিনার, শ্রেণিভিত্তিক আলোচনার আয়োজন করবে। পাশাপাশি পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার বিতরণসহ নানা প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কমিটির সদস্যরা প্রয়োজনে মাদকসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা বা সন্দেহভাজন ঘটনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে রাখতে পরামর্শ, সহায়তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতাও কমিটির অন্যতম কাজের অংশ। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তারা মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং অন্য শিক্ষকদেরও এই কাজে উদ্বুদ্ধ করবেন।